প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করতে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘাতের অবসানে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমি যুদ্ধ চাই নে, শান্তি চাই; মানবকল্যাণ চাই মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি চাই আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বিশ্ব, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার আকুল আবেদন, যুদ্ধ, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন সমুন্নত হোক মানবিক মূল্যবোধ।’

শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেলে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের প্রতি এ আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেওয়া হয় এর প্রভাব শুধু একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সব মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসংকটে পতিত হয় মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয় খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয় বিশেষ করে শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে হারিয়ে যায় বিশ্ববিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাংশন বন্ধ করুন শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন।’

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা দেখতে চাই, একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব- যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টা আমাদের একটি মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরও সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে, সঙ্কটের মুহূর্তে বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার মূল ভিত্তি হলো জাতিসংঘ। তাই সর্বস্তরের জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা অর্জনের জন্য জাতিসংঘকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে সকলের প্রত্যাশা পূরণে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, যুদ্ধ বা একতরফা জবরদস্তিমূলক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মতো বৈরীপন্থা কখনও কোন জাতির মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। পারস্পরিক আলাপ-আলোচনাই সঙ্কট ও বিরোধ নিষ্পত্তির সর্বোত্তম উপায়। এই পরিপ্রেক্ষিতে, ‘গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপ’ গঠন করায় জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, এই গ্রুপের একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে, আমি বর্তমান পরিস্থিতির গুরুত্ব ও সঙ্কটের গভীরতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি বৈশ্বিক সমাধান নিরূপণ করতে অন্যান্য বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমন, সংঘাত প্রতিরোধ এবং আর্থিক, বিদ্যুত ও জ্বালানি সঙ্কটের মতো বৈশ্বিক প্রতিকূলতাগুলোর রূপান্তরমূলক সমাধান খুঁজতে আগ্রহী। তবে আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা ব্যতীত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তিনি বলেন, আমরা ইউক্রেন ও রাশিয়ার সংঘাতের অবসান চাই। নিষেধাজ্ঞা, পাল্টা-নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে একটি দেশকে শাস্তি দিতে গিয়ে নারী, শিশুসহ ও গোটা মানবজাতিকেই শাস্তি দেয়া হয়। এর প্রভাব কেবল একটি দেশেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং সকল মানুষের জীবন-জীবিকা মহাসঙ্কটে পতিত হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়। বিশেষ করে, শিশুরাই বেশি কষ্ট ভোগ করে। তাদের ভবিষ্যত অন্ধকারে হারিয়ে যায়।

বিশ্ব বিবেকের প্রতি আবেদন জানিয়ে বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, বিশ্ব বিবেকের কাছে আমার আবেদন, অস্ত্র প্রতিযোগিতা, যুদ্ধ, স্যাঙ্কশন বন্ধ করুন। শিশুকে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপত্তা দিন। শান্তি প্রতিষ্ঠা করুন। আমরা দেখতে চাই, একটি শান্তিপূর্ণ বিশ্ব- যেখানে থাকবে বর্ধিত সহযোগিতা, সংহতি, পারস্পরিক সমৃদ্ধি এবং ঐকবদ্ধ প্রচেষ্টা। আমাদের একটি মাত্র পৃথিবী এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এই গ্রহকে আরও সুন্দর করে রেখে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় একাত্তর সালে যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং ’৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর হত্যা-ক্যু’র রাজনীতির কথা তুলে ধরে বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা, হত্যা-ক্যু-সংঘাতে মানুষের যে কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা হয়, ভুক্তভোগী হিসেবে আমি তা উপলব্ধি করতে পারি। তাই যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই, মানবকল্যাণ চাই। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি চাই। আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বিশ্ব, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে চাই। তাই বিশ্ব নেতাদের প্রতি আমার আকুল আবেদন- যুদ্ধ, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। সমুন্নত হোক মানবিক মূল্যবোধ। আসুন, সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে আমরা একটি উত্তম ভবিষ্যত তৈরির পথে এগিয়ে যাই।